বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজি থাকলে আগামীকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।
সোমবার দুপুরে কারা অধিদপ্তরে ইফতেখার উদ্দিন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
গত রোববার কারাগারে বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে এসে তার চিকিৎসকরা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি ৫-৭ মিনিট অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন।
অন্যদিকে গতকাল সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া অজ্ঞান হননি। তার সুগার কমে গিয়েছিল।
‘মাইল্ড স্ট্রোক’-এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ১০ জুন রোববার খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হবে।
১০ জুন রোববার সচিবালয়ে বিচারকদের মধ্যে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তারপরও দু’দিন পিছিয়ে গেল।
৯ জুন শনিবার বিকেলে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে বের হয়ে তার চার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দাবি করেন, গত ৫ জুন দুপুরে হঠাৎ করে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান এবং ৫-৭ মিনিট অচেতন ছিলেন খালেদা জিয়া।
এদিকে নিজের কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, খালেদা জিয়া অজ্ঞান হয়েছেন বলে যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা ঠিক না। তিনি ঠিক দাঁড়ানো থেকে ঘুরে গিয়েছেন। তখন তাকে চকলেট খাইয়ে ঠিক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি আইজি প্রিজনের (কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন) সঙ্গে আলাপ করেছি। তিনি যে তথ্য দিয়েছেন সেটা হলো, গত ৫ তারিখ ইফতারের ঠিক আগে খালেদা জিয়ার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিল।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে কারাগারের বাইরে বিশেষায়িত একটি হাসপাতালে ভর্তি করতেও কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেছেন তারা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি আছেন বিএনপি প্রধান। কারাগারে খালেদা জিয়াকে রাখার পর থেকেই বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এর মধ্যে একবার বিএসএমএমইউতে নিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করায় কারা কর্তৃপক্ষ।
শনিবার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে বের হয়ে চার চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী, নিউরো মেডিসিনের অধ্যাপক সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমান, চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এবং কার্ডিওলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ আল মামুন মাইল্ড স্ট্রোকের কথা জানান।
এদিকে খালেদা জিয়া কারাগারের ভেতরে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ১ হাজার ১০১ জন চিকিৎসক। শনিবার সংবাদমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতে তারা বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা শুক্রবার তার সঙ্গে দেখা করে জানতে পারেন যে- তিনি গত ৫ জুন মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছেন এবং দুই সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছেন।
‘কারা কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা নিয়ে পুরোপুরি উদাসীন। সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষ তার সুচিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব তার সুচিকিৎসার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চার বার চিঠি দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি।’
তারা বলেন, খালেদা জিয়া বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ। প্রতিরাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। কাশি ও জ্বর নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ডান চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছে। সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস রোগের ভয়াবহতার কারণে বাম হাত ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কোমরের সমস্যার কারণে শরীরের বাম পাশ ও বাম পায়ের তীব্র ব্যথা ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামছে। তিনি হাঁটা-চলাও করতে পারছেন না।
তারা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে তাকে সুচিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসাপাতালে স্থানান্তরের জোর দাবি জানান।
- ব্রেকিংবিডিনিউজ২৪ / ১০ জুন ২০১৮ / তানজিল আহমেদ